।।যাপিত জীবন প্রতিবেদন।।
রোজা মানুষকে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে। আর এই সুশৃঙ্খল জীবনই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য অপরিহার্য। রমজান সমাগত। তবে রমজান মাস শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু বিশেষ সতর্কতা, নিয়ম আর শৃঙ্খলা মেনে চললে বেশির ভাগ ডায়াবেটিক রোগীই রোজা রাখতে পারেন এবং এতে তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সহজে ও নিরাপদে রোজা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রয়োজন পূর্বপ্রস্তুতি ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁদের জন্য ডায়াবেটিস কোনো বাধা নয়।
এ জন্য প্রয়োজন কিছু পূর্বপ্রস্তুতি
► রমজানের ফরজ রোজা সঠিকভাবে আদায়ের জন্য রোজার আগে থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। ► চিকিৎসক রোজার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়গুলো বাতলে দেবেন। ► হাইপো না হওয়ার জন্য খাদ্য, ব্যায়াম এবং ওষুধের সমন্বয় করে দেবেন। ► দিন-রাত সুগার পরিমাপ করে ওষুধ সমন্বয়ের ব্যাপারে রোগী ও রোগীর পরিবার সবাইকে শিক্ষা প্রদান করবেন। ► প্রত্যেক রোগীর জন্য একই ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয় বিধায় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। ► রমজানের আগে নফল রোজা রেখেও প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। ► রোজার জন্য সব স্বাস্থ্যবিধি পালন করেও যদি স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের রোজা না রাখাই উচিত। সে ক্ষেত্রে ফিদিয়া বা কাজা রাখার বিধান আছে। যেসব জটিলতা হতে পারে ডায়াবেটিক রোগীদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। যাঁরা পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন তাঁরা বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন— ► রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) ► রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) ► ডায়াবেটিক কিটো-অ্যাসিডোসিস ► পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি।
ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন
► রমজানের আগে আগে ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন। অন্য সময়ের তুলনায় সাধারণত এ সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ কিছুটা কমিয়ে আনতে হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনবারের ওষুধ একবার বা দুইবারে পরিবর্তন করে আনুন। ► রমজানের আগে থেকে সকাল বা দুপুরের ওষুধ রাতে খাওয়ার অভ্যাস করুন। অর্থাৎ যাঁরা মুখে খাওয়ার ওষুধ খান তাঁরা সকালের ডোজটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক পরিমাণে সাহরির আধাঘণ্টা আগে খাবেন। ► যাঁরা দিনে এক বেলা ওষুধ খান, তাঁরা ইফতারের আগে পরিমাণে একটু কম খাবেন। ► ইনসুলিনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। অর্থাৎ সকালের ডোজটি ইফতারের আগে, রাতের ডোজটি কিছুটা কমিয়ে সাহরির আধাঘণ্টা আগে। কতটা কমাবেন তা চিকিৎসক বলে দেবেন। ► দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করে এ রকম কিছু ইনসুলিন এখন বাজারে পাওয়া যায়। এসব ইনসুলিন দিনে একবার নিলেই হয়। এতে হঠাৎ সুগার কমে যাওয়ার ভয়ও কম থাকে। রোজার সময় মুখে খাওয়ার ওষুধের ক্ষেত্রে এ রকম দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করা ওষুধ ব্যবহার কিছুটা নিরাপদ।
নিয়মিত সুগার পরীক্ষা করুন
► রোজার সময় রাতে, এমনকি দিনেও সুগার মাপুন; যাতে ওষুধের মাত্রা ঠিকভাবে সমন্বয় করা যায়। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। ► সাহরির দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারের এক ঘণ্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করুন। যদি সুগারের পরিমাণ কমে ৩.৯ মিলিমোল/লিটার হয়ে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। ► রোজায় যদি সুগারের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি হয়, তাহলে প্রস্রাবে কিটোন বডি পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নেওয়া যেতে পারে। ► রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা, এমনকি প্রয়োজন হলে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়া যেতে পারে। ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং এসব নিয়ম মেনে ডায়াবেটিক রোজাদার রোজা রাখতে পারবেন। ► রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে চা চামচের ৪ থেকে ৬ চামচ গ্লকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে। গ্লুকোজ বা চিনি না থাকলে যেকোনো খাবার সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে। ► রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইঞ্জেকশন দিতে হবে। ► যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
এসএফ