পরিবারের উপর ক্ষোভ থেকে তার মনে লালন করেন হত্যার পরিকল্পনা । ৬ মাস আগে থেকে এ পরিকল্পনা চলছিল মেহজাবিনের কিন্তু একাধিক ব্যাক্তিকে হত্যার কৌশল শিখতে ভারতের সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখা শুরু করেন তিনি।
দুই মাস আগেও তিনি একবার তরমুজের জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরিবারের সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। রাজধানীর কদমতলীতে বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমি ইসলাম ও বোন জান্নাতুল ইসলামকে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করে অচেতন করেন এরপর হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে তিনজনকে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মেহজাবিন ইসলাম একাই তিনজনকে খুন করেছেন দাবি করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, মেহজাবিন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, দক্ষিণ ভারতের একটি সিনেমা দেখে তিনি সায়ানাইড (রাসায়নিক দ্রব্য, বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়) প্রয়োগ করে সবাইকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। ওই সিনেমায় সায়ানাইড প্রয়োগ করে একই পরিবারের ১১ জনকে খুন করতে দেখানো হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে সায়ানাইড সংগ্রহ করারও চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটা পারেননি। এ কারণে ক্রাইম পেট্রোলে দেখা কৌশলেই খুনের পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি পাবজি গেমেও (অনলাইনে অ্যাকশনধর্মী গেম) আসক্ত ছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাতে মেহজাবিন ইসলাম ও তাঁর স্বামী শফিকুল ইসলামকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত মাসুদ রানার ভাই শাখাওয়াত হোসেন। কদমতলী থানায় করা মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, শফিকুলের প্ররোচনায় মেহজাবিন তিনজনকে খুন করেন। ওই মামলায় মেহজাবিনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর আসামি শফিকুল ইসলামকেও গতকাল দুপুরে কদমতলী থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ গতকাল বিকেলে বলেন, প্রধান সন্দেহভাজন মেহজাবিনের দাবি, এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত নন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়ার পাশাপাশি মামলায় তাঁর স্বামী শফিকুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শফিকুলের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের পরই বোঝা যাবে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না।
খুনের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু বিষয় নিয়ে শিশুকাল থেকেই মায়ের প্রতি মেহজাবিনের ক্ষোভ ছিল। পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি হতাশ ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা অবস্থায় তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন। সেখানে তাঁর দুই ছেলেসন্তান রয়েছে। এ নিয়ে বাবার প্রতি তাঁর ক্ষোভ ছিল। তিন মাস আগে তাঁর বাবা দেশে ফেরেন। ছোট বোনের প্রতিও মেহজাবিনের ক্ষোভ ছিল। এসব কারণেই তিনি মা–বাবা ও বোনকে হত্যা করেন।
পুলিশ জানায়, রিমান্ডে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনজনকে খুন করার পরও তাঁর মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তাঁর দাবি, খুনের পর তিনি স্বস্তি অনুভব করছেন। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।