||খেলার মাঠ প্রতিবেদন||
বোকা জুনিয়র্সকে মাত্রই তুলেছেন কোপা লিবার্তাদোরেসের শেষ ষোলয়। অর্ধেক মৌসুমও শেষ হয়নি, এরই মধ্যে দল ছাড়ার ঘোষণা দিলেন কার্লোস তেভেজ। যে কারণ দেখিয়ে জানালেন বিদায়, সেটা সাধারণত অবসর নেওয়ার সময়ই কোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে শোনা যায়। আর তাই তেভেজের অবসর নিয়েও গুঞ্জন উঠছে বেশ।
তার বোকা জুনিয়র্স ছেড়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিশ্চিত, তবে পুরোপুরি অবসরের যাওয়া নিয়ে তেভেজ নিজেই আছেন দোটানায়। অবসরে যাবেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘আমি জানি না আমি অবসর নেব কিনা, কারণ তিন মাস পর আবারও আমার খেলার ইচ্ছে হতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত যে আমি আর বোকা জুনিয়র্সের জার্সি আর পরছি না, এই অধ্যায়টা শেষ।’ আর্জেন্টিনা স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি।
তবে তার পরের কথাটিই তার অবসরের গুঞ্জনে বেগ দিচ্ছে। তেভেজ যোগ করেন, ‘আজ আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের একটা দিন। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি খুশি। মানসিকভাবে আমি শতভাগ দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত নই, আর তাই আমার সরে যাওয়ার কথা মনে হচ্ছে। আর আমি সেটাই করছি এখন।’
শারীরিকভাবে অবশ্য তিনি এখনও পুরোপুরি ফিট, মনে করেন তেভেজ। বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি ভালোই ফিট আছি, কিন্তু বোকায় নিজের ১২০ শতাংশ ঢেলে দেওয়া চাই আমার। আজ আমি সেটা দিতে পারছি না। তিন মাস আগে যখন আমার বাবা মারা গেলেন, তখনো আমি এ শোক কাটিয়ে ওঠার সময় পাইনি। ফিরে এসেই আমাকে খেলায় নামতে হয়েছে। সরে গিয়ে এখন আমার পরিবারকে দেওয়ার সময় প্রয়োজন।’
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তিনি ৭৩ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১৩টি। তবে তার প্রজন্মের আর সবার মতোই তিনিও কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেননি। ২০০৬ আর ২০১০ বিশ্বকাপে খেলেছেন। কোপা আমেরিকাতেও তিনটি ফাইনালে হেরেছেন তিনি, ফিরে এসেছেন শিরোপাজয়ের হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে।
দক্ষিণ আমেরিকান দেশটিতে তার জনপ্রিয়তা লিওনেল মেসির চেয়েও বেশি। জনগনের সম্মানের মানদণ্ডে কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার পরেই স্থান তার। এজন্যে গণমানুষের খেলোয়াড়ও আখ্যা দেওয়া হয় তাকে। ২০০৩ সালে বোকার হয়েই কোপা লিবার্তাদোরেস ও ক্লাব বিশ্বকাপ, আর করিন্থিয়ান্সের হয়ে ২০০৫ সালে লিগ শিরোপা জেতার সময় টানা তিন বছর দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষসেরা ফুটবলারও হয়েছিলেন তিনি।
প্রিমিয়ার লিগ আর সিরি’আতেও সাফল্য পিছু নিয়েছে তার। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট হ্যামে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটিকে অবনমনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। পরের বছরই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন তিনি, দলকে জেতান লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০০৯ সালে তিনি যোগ দেন নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে। সেখানেও একটি লিগ জেতেন তিনি, এর আগে জেতেন এফএ কাপ শিরোপাও।
২০১৩ সালে জুভেন্তাসে যোগ দেন তিনি, সেখানে লিগ জেতার পাশাপাশি খেলেছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালেও। ২০১৫ সালে বোকায় ফিরে আসেন তিনি। ৫৬ ম্যাচে ২৫ গোল করে আবারও ক্লাব ছাড়েন তেভেজ, এবার উদ্দেশ্য ছিল চীনা লিগে সাংহাই শেনহুয়ায় যোগ দেওয়া। বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভুক্ত খেলোয়াড়ও বনে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেখানে মন টেকেনি তার, জানিয়েছিলেন, সেখানে পা রেখেই আর্জেন্টিনায় ফিরতে মন চাইছিল তার। ফলে তিনি ফিরে আসেন আর্জেন্টিনায়। প্রথম মৌসুমে দশ ম্যাচে করেছেন তিন গোল। পরের মৌসুমে বোকার শিরোপা জেতা গোলটা আসে তার পা থেকেই। সেই তেভেজই এবার দিলেন অবসরের ঘোষণা।