হাজারো মুক্তিযোদ্ধাদের ওস্তাদ মরহুম দবির উদ্দিন কে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেলা কমিটির যাচাই বাছাইয়ে স্বীকৃতি মিললো
।। বঙ্গকথন বিশেষ প্রতিবেদ ।।
হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষকে মাঠে মাঠে ঘুরে যিঁনি প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছিলেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে । সেই ওস্তাদ দবির উদ্দিন আহম্মেদ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর গত ২৫ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেলা কমিটির যাচাই বাছাইয়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন । মরহুম দবির উদ্দিনকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি পেতে।
২০ বছর বয়সে বৃটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বগুড়ার দরি উদ্দিন আহম্মেদ । অংশগ্রহণ করেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে মায়ানমারসহ অংশ গ্রহন করেন বেশ কয়েকটি দেশে । ৪৭ ‘র দেশ ভাগের পর যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে । অবসর গ্রহন করেন সুবেদার মেজর হিসেবে ১৯৬৪ সালে । অবসর গ্রহণের পর থেকে বগুড়ার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেন দবির উদ্দিন । আর তাই তখন থেকেই বেশ পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ।

পরবর্তিসময়ে দবির উদ্দিন আহম্মেদ থেকে তিনি হয়ে ওঠেন “ ওস্তাদ দবির উদ্দিন ” । তার একমাত্র কারন, এই বীর সেনা ১৯৭১ ‘র এর উত্তাল সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলেন উত্তরের হাজারো মুক্তিযোদ্ধাদের । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ওস্তাদ দবির উদ্দিন সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাওয়ার । বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষন একইভাবে আলোড়িত করে তোলে বগুড়ার হাজার হাজার যুবকের মন । ওস্তাদ দবির নিজের বাড়েতেই তৈরী করেন বাঙ্কার । শুরু করেন স্থানীয় কয়েকজনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম । সে সময়ে এদেশের যুবকদের খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের । দবির উদ্দিনের নাম ততক্ষনে জানা হয়ে যায় সকলের । তাঁকে অনুরোধ করা হয় বগুড়ার ছেলে-মেয়েদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য । সেই শুরু । এরপর বগুড়া জিলা স্কুল, করোনেশন ইনস্টিটিউশন, সেন্ট্রাল স্কুরে পুরুষদের আর ভিএম স্কুলে দিতে শুরু করেন নারীদের প্রশিক্ষণ ।এভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘুরে ঘুরে তিনি কাঠের রাইফেল আর বাঁশের লাঠি দিয়ে যুদ্ধ-প্রতিরোধের জন্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রস্তুত করেছিলেন অন্তত ৩ হাজার মুক্তিকামী মানুষদের । আর সেই থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের “ওস্তাদ” হয়ে ওঠেন বগুড়ার এই কৃতি সন্তান ।
ওস্তাদের নাম ছড়িয়ে পরে দেশব্যাপি । মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে ডাক আসে হিলি ইয়্যুথ ক্যাম্প থেকে । ৭ ‘র ২০ জুন থেকে ওস্তাদ দবির উদ্দিন আহম্মেদ হিলিতে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত মুক্তিকামী মানুষদের । পাশাপাশি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধেও ।দিনাজপুরের পতিরাম ইয়্যুথ ক্যাম্পে ৭ নাম্বর সেক্টরের হাজারো মানুষকে প্রশিক্ষিত করেন দবির উদ্দিন।

জন্ম ৩০ নভেম্বর ১৯১৯
মৃত্যু ২৬ জুন ১৯৭৯
যুদ্ধ শেষে বিজয়ের উল্লাস আর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে তিনি সাথে সাথেই ফিরে আসেননি বাড়ি । যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকায় ক্ষত বিক্ষত আহত মুক্তিযোদ্ধানের উদ্ধার কাজে অংশগ্রহন করেছেন । শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে । সবশেষে ১৯৭২ সালের ৫ জানুয়ারি বগুড়ার সেউজগাড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন এই বীর সেনা । কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখলেন পাক হানাদার বাহিনী তাঁর বাড়িঘর সব ধ্বংস-বিধ্বস্ত করে রেখে গেছে । পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে শুরু করেন নতুন এক অধ্যায় । বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে হাত দিলেন ওস্তাদ দবির উদ্দিন । প্রতিষ্ঠা করলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ । তিনিই ছিলেন বগুড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ।১৯১৯ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এই বীর । ১৯৭৯ সালের ২৬ জুন বয়স যখন ৭০ মৃত্যুবরন করেন ওস্তাদ দবির উদ্দিন আহম্মেদ ।
বাঙ্গালীর মুক্তির ৪৯ বছর পেড়িয়ে যাচ্ছে আর সম্প্রতি এসে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের ওস্তাদ দবির উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা যাচাই বাছাই শেষে জেলা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে – তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ! তাঁর হাতে তৈরী হাজারো শিষ্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহু বছর আগেই পেয়েছেন স্বীকৃতি, ঢুকে গেছে সময়ের ফাঁফোকড় গলে অসংখ্য ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার নামো ! অথচ এখনো রাষ্ট্র চূড়ান্ত করতে পারেনি “ওস্তাদ দবির উদ্দিন”- মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি না !!