সংস্কৃতির মঞ্চ প্রতিবেদন
বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহের ২৪তম মৃতুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৬ সালের এই দিনে তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। দীর্ঘ দুই যুগ পার হলেও তুমুল জনপ্রিয় এই নায়কের মৃত্যু-রহস্য আজও উদ্ঘাটন হয়নি।
সালমান শাহ বাংলাদেশের ১৯৯০-এর দশকের শ্রেষ্ঠ নায়ক। তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে পড়ালেখা শুরু করেন। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী ছিলেন তার সহপাঠী। ১৯৮৭ সালে ধানমন্ডির আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম. পাস করেন।
১৯৮৫ সালে বিটিভির ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটক দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু সালমানের। উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘দেয়াল’, ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’ , ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘পাথর সময়’ ও ‘ইতিকথা’। ‘নয়ন’ নাটকের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি-‘বাচসাস পুরস্কার’ লাভ করেন। এর মাঝে মিল্ক ভিটা, জাগুয়ার কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকা-কোলা ও ফানটার বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেন সালমান।

১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে সিনেমায় অভিনয় শুরু এই তারকার। এই ছবির জন্য পারিশ্রমিক পান ২৫ হাজার টাকা। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। পরে মৌসুমীর বিপরীতে আরও তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবি তিনটি- অন্তরে অন্তরে, স্নেহ ও দেনমোহর।
২য় সিনেমা ‘তুমি আমার’ দিয়ে শাবনূরের সাথে জুটিবব্ধ হন এই নায়ক। এই জুটি মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করে এবং যার সবগুলোই ছিলো ব্যবসা সফল। সালমানের নায়িকাদের মধ্যে আরো ছিলেন সোনিয়া, বৃষ্টি, শিল্পী, কাঞ্চি, শ্যামা, সাবরিনা ও শাহনাজ।
চারবছরের চলচ্চিত্রে অভিনয় জীবনে সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন এবং সবকয়টিই ছিল ব্যবসাসফল। পর্দায় তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ছিলো বাংলা চলচ্চিত্রের ২য় সর্বাধিক আয় করা সিনেমা। তৎকালীন সময়ে ছবিটি ১৯ কোটি টাকা ব্যবসা করে। তার অভিনীত শেষ ছবি ‘বুকের ভেতর আগুন’।

১৯৯২ সামিরা হককে বিয়ে করেন সে সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই নায়ক। বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী সামিরা হক সালমানের দুটি চলচ্চিত্রে পোশাক ডিজাইনার ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন এই নায়ক। পরে তদন্তে জানা যায়, আত্মহত্যা করেছেন তিনি। যদিও অভিযোগ ওঠে, তাকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পনামাফিক। যদিও দুই যুগেও উদঘাটন হয় নি সালমানের মৃত্যু-রহস্য।