।।খেলার মাঠ প্রতিবেদন।।
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচে খুব একটা ভালো খেলেননি। দু-একটা মুহূর্ত ছাড়া আলো ছড়াতে পারেনননি। আর্জেন্টিনাও জয় পায়নি। পেরুর মাঠে আজও লিওনেল মেসি গোল পাননি, কোনো গোল করাতেও পারেননি। তবে দারুণ খেলেছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। তাই আর্জেন্টিনাও পেয়েছে দারুণ এক জয়। ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আজ পেরুকে তাদেরই মাঠে ২-০ গোলে হারিয়ে এসেছে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ৩০ মিনিটের মধ্যেই আর্জেন্টিনা পেয়ে গেছে গোল দুটি। প্রথমটি জার্মান ক্লাব ভিএফবি স্টুটগার্টের উইঙ্গার নিকোলাস গঞ্জালেজের পা থেকে, দ্বিতীয়টি এসেছে ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজের সৌজন্যে। প্রথম ৪৫ মিনিটকে সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনার সেরা অর্ধও বলা যায়!
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচটা ড্র করে আর্জেন্টিনার শতভাগ জয়ের ধারা থেমে গেছে। তবে এই ম্যাচ জিতে ২০২২ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে চার ম্যাচ শেষে অজেয় থাকল আর্জেন্টিনা। ৪ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে লিওনেল স্কালোনির দল, ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ব্রাজিল, যারা সর্বশেষ রাউন্ডে একই ব্যবধানে হারিয়েছে উরুগুয়েকে।
কোন ১১ জন আজ মাঠে নামবেন, সেটি কালই জানিয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। রক্ষণে চোট কাটিয়ে ফিরেছেন লেফটব্যাক নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, মাঝমাঠে চোট পাওয়া এজেকিয়েল পালাসিওসের বদলে এলেন জিওভান্নি লো সেলসো, আক্রমণে সেভিয়ার লুকাস ওকাম্পোসের বদলে জার্মান ক্লাব স্টুটগার্টে খেলা উইঙ্গার নিকোলাস গঞ্জালেজ। আগের ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরানো এই গঞ্জালেজই আজ ১৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিয়েছেন দারুণ এক গোলে। বাঁ দিক থেকে লাওতারোর ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের মাটি কামড়ানো জোরালো শটে বল জালে জড়িয়েছেন গঞ্জালেজ।
ম্যাচে প্রথম গোলের সুযোগটা অবশ্য পেরুরই ছিল। ম্যাচের দশম মিনিটেই পেরুর উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ান কেভা পড়ে যান আর্জেন্টিনা বক্সে। সেটি আর্জেন্টিনা গোলকিপার ফ্রাঙ্কো আরমানির ধাক্কাতেই কি না, পেরুকে পেনাল্টি দেওয়া হবে কি না, সেটি দেখতে ভিএআরের ডাক পড়ে। ভিএআর দেখার পর মাঠের রেফারি নিজে মাঠের পাশে থাকা মনিটরে দেখে সিদ্ধান্ত নেন, ফাউল হয়নি। হাঁপ ছেড়ে বাঁচে আর্জেন্টিনা। এর সাত মিনিট পরই আর্জেন্টিনার এগিয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয় গোল পেতেও বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। ২৮ মিনিটে মেসির কাছ থেকে পাস পেয়ে দারুণভাবে সেটি সামনে বাড়িয়ে দেন লো সেলসো। সে পাস ধরে গোলকিপারকে কাটিয়ে গোল লাওতারো মার্তিনেজের! ২০১৮ বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন শেষে স্কালোনি কোচ হয়ে আসার পর আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষিক্ত ২৩ বছর বয়সী স্ট্রাইকার এ নিয়ে ২১ ম্যাচে করলেন ১১ গোল।
দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল পেরুই। ৫৪ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে ভেসে আসা বলে ছয় গজের বক্সের মধ্যে থেকেও হেড করে পোস্টের বাইরে মারেন পেরু ডিফেন্ডার অ্যান্ডারসন সান্তামারিয়া। এই সান্তামারিয়াই ৮ মিনিট পর পেরু সমর্থকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন প্রায়। পেরুর বক্সে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঢুকতে যাচ্ছিলেন মেসি, তাঁকে ফেলে দেন সান্তামারিয়া। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত আসবে মনে হচ্ছিল, কিন্তু রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ৭৭ মিনিটে আবার গোলের খুব কাছে গিয়েছিলেন মেসি। গোলটা হলে চোখধাঁধানো গোলই হতো! মেসির ক্যারিয়ারে অবশ্য এমন গোল কম নেই! বল পায়ে পুরো পেরুর অর্ধটা দৌড়ে পার করেন মেসি, যাওয়ার পথে তিন পেরু ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে যান অনায়াসে। পেরু বক্সে ঢুকে বাঁ দিকের পোস্ট লক্ষ্য করে শট মেরেছিলেন, কিন্তু আর্জেন্টিনা অধিনায়কের শট চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে বাইরে।
গোল না পেলেও পুরো ম্যাচে দলের জন্য সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন মেসি। তাঁর খেলার যে দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়, সেই প্রেসিং করেছেন বারবার। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতে তাঁকে নেমে আসতে দেখা গেছে বেশ কয়েকবার। গোলটা হলে ম্যাচটা হয়তো তাঁর জন্য সর্বাঙ্গ সুন্দর হতো।
তা না হোক, আর্জেন্টিনা জিতেছে, তাতেই খুশি থাকার কথা মেসির। টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পরের ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের মার্চে। কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে তখন, সেবারের ম্যাচ দুটি খেলতে হবে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিপক্ষে।বিজ্ঞাপন