||সংস্কৃতির মঞ্চ প্রতিবেদন||
গত শুক্রবার সাতমাথায় মঞ্চায়িত হলো বলাকা অপেরার যাত্রাপালা “মহানায়ক বঙ্গবন্ধু।” কর্নেট, বাঁশি, ঢোল, ঝামের মিলিত ঐক্যতানে বহুদিন পর সাতমাথার মানুষ দেখলো হাজার বছরের যাত্রাপালার সম্মোহনি শক্তি। হাজারো মানুষ বসে, দাঁড়িয়ে, উঁচু দেয়ালে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেছে বলাকা অপেরার পরিবেশনায় যাত্রাপালা “মহানায়ক বঙ্গবন্ধু।”
বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে রূপদান করেছেন যশোরের যাত্রাশিল্পী এস, এম শফিক। বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত সংলাপে মানুষ যেমন আলোড়িত হয়েছে তেমনি খন্দকার মোশতাক সহ বিপথগামী সেনাসদস্যদের ঘৃণ্য চক্রান্ত মানুষকে নাড়া দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতা অর্জনে জাতীয় চারনেতা সহ সাধারণ মানুষের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তি সময়ে নানা চক্রান্ত ও সর্বশেষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা দৃশ্য মানুষকে আরো একবার শিউরে তুলেছিল। চোখের সামনে ঐতিহাসিক চরিত্র ভয়ঙ্কর টিক্কা খান, ভুট্টু, ভাসানি, ইয়াহিয়া খান সহ জাতীয় চারনেতা, বেগম মুজিব, শিশু রাসেল, জামাল, কামাল, মেজর নূর, হুদা, ডালিম, ফারুক, রশিদ সহ বিভিন্ন চরিত্রকে দেখে সাধারণ মানুষের ইতিহাসের এক দারুণ পাঠ হয়।

বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল, বর্ণাঢ্য সেই আলোকিত জীবনভাষ্য শিল্পীত আকারে যাত্রাপালার মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াসেই বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের আয়োজনে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শিল্পকলা একাডেমি ও বগুড়া থিয়েটারের সহযোগিতায় সাতমাথার মুজিব মঞ্চে মঞ্চায়িত হলো যাত্রাপালা মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। এ যাত্রাপালায় ৩৩ জনের দলে বরেণ্য যাত্রাশিল্পী ছাড়াও থিয়েটারের নাট্যকর্মীরাও অভিনয় করেছেন।
যাত্রাপালা মঞ্চায়নের পূর্বে গুণীজনদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলচনা সভায় সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার এর সাধারন সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না।প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক,বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ মোকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান রনি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাহাদাৎ হোসেন- জেলা কালচারাল অফিসার ,আবু সাইদ সিদ্দিকি, সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়া,আব্দুল হান্নান- আন্তর্জাতিক সম্পাদক বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।

জেলাপ্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বাংলার সংস্কৃতিতে যাত্রাপালার অবদানের কথা স্বীকার করেন, রাগেবুল আহসান রিপু বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়া যাবে না, ঘাতকের বুলেট বঙ্গবন্ধুর জীবনের সমাপ্তি টানলেও লাখো কোটি মানুষের মাজগে মুজিবের চেতনা ছড়িয়ে পরেছে বাংলার জনপদে। যাত্রাপালায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মুজিবকে অঙ্কন এক অনন্য প্রয়াস।
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না জানান বঙ্গবন্ধুর আলোকিত জীবনকে বিভিন্ন ভাবে রূপদান করা হয়েছে কিন্তু যাত্রাপালার মঞ্চে এই অমর, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মহানায়কের জীবনপট অঙ্কন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের । আগামীতে এই যাত্রাপালার কাহিনীতে আরো কিছু সংশোধনী এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মঞ্চে মঞ্চায়িত করা হবে যাতে যাত্রাপালা আবারো সগৌরবে ফিরতে পারে।
মহানায়ক বঙ্গবন্ধু যাত্রাপালাটি রচনা করেছেন মৃনাল কান্তি দে ও নির্দেশনা দিয়েছেন মাছুদুল হক বাচ্চু।