কেমন হতে পারে আগামীতে কৃষি? [পর্ব-২]

0 1,338

||ক্ষেত-খামার প্রতিবেদন||

পর্ব-২|
এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো Vertical Farming-এর প্রয়োজনীয়তা, এর সুবিধা ও এর সাহায্যে উৎপাদিত শাকসব্জি নিয়ে। যারা Vertical Farming কি ও এর ইতিহাস জানতে চান, তারা আগের পর্বটি [পর্ব-১] দেখলে এই পর্বটি বুঝতে তাদের সুবিধা হবে।

Vertical Farming-এর প্রয়োজনীয়তাঃ

গবেষণা বলছে, উন্নত দেশগুলিতে ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্যের উৎপাদনের পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে প্রায় ১০০ শতাংশ এর কারণ অবশ্যই বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনবিস্ফোরণ।

২০০৫-২০০৭ সালের একটি রিপোর্ট অনুসারে সমস্ত দেশই তাদের অধিকাংশ জমি কৃষির জন্য প্রায় ব্যবহার করে ফেলেছে, উদাহরণ স্বরূপ ইংল্যান্ডের কথা বলা যেতে পারে, ব্রিটিশরা তাদের দেশের মোট কৃষিজমির ৭২ শতাংশই প্রায় ব্যবহার করে ফেলেছে এবং তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের ভোগের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে পেরেছে, এর জন্য তাদের যদি ৭০ শতাংশ ফসল বেশী উৎপাদন করতে হয় তবে রপ্তানির পরিমাণ হতে হবে ১৪০ শতাংশ (বর্তমান হিসাব অনুসারে)। এই অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ ফসল উৎপাদন করতে হলে এই দেশের কৃষির জন্য বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবহার করতেই হবে।

Sir Dickson Despommier-এর রচিত ২০১০ সালের একটি বই “The Vertical Farming; Feeding the world in the 21st century” থেকে একটি বিষয় আঁচ করা গেছে যে vertical farming ব্যবস্থা আদতে একটি শহুরে কৃষির প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে, যার অনুসরণ করে বর্তমান বিশ্বে শহুরে বাড়িঘরের নির্মাণ কার্য চলছে। বাড়ির নির্মাতা ও ভাস্করাও নিজেদের সেইভাবে তৈরি করেছেন।

Vertical Agriculture, Farming
Vertical Agriculture, Farming

আমাদের দেশে বিভিন্ন শহরাঞ্চলে কম শতাংশের হলেও মানুষের মধ্যে এই ধরণের কৃষিতে ঝোঁক বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা বাড়ালে হয়তো বহু মানুষ-ই নিজের থেকেই এই কাজে নিজেদেরকে নিযুক্ত করতে সক্ষম হবেন।

Vertical Farming-এর সুবিধা

Vertical Farming-কে বিজ্ঞানীমহলের তরফ থেকে কেন বেশী সুবিধাজনক বলা হচ্ছে, তার কারণ সমূহ-

  • এই ধরণের কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে সারা বৎসর গৃহস্থালিনভাবে প্রয়োজনীয় ফসলকে উৎপাদন করা যায়।
  • কৃষিকার্য সম্পর্কীত যে সমস্ত অভাব বা অসুবিধাসমূহ রয়েছে সেগুলির সম্মুখীন খুব বেশী হতে হয় না।
  • জ্বালানীর ব্যবহার সবথেকে কম হয় (উল্লেখ্য-গ্রামীণ কৃষিতে কৃষি-যন্ত্রাদি ও পরিবহন কার্যে অনেক বেশী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হয়ে থাকে)
  • এই কৃষিতে বাড়ির অপ্রয়োজনীয় ও অব্যবহৃত বস্তুসমূহকে ভালোভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
  • এই ধরণের কৃষি বাড়ির অন্দরমহলে সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত হয় বলে কীট আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যহানির কোনো সম্ভাবনা নেই।
  • vertical farming এর মাধ্যমে শহরাঞ্চলে বা তৎসংলগ্ন এলাকায় কৃষির প্রবহমানতা সৃষ্টি করা যায়।
  • এই পদ্ধতিতে জলের অপচয় অনেক কম হয় কারণ কৃষিতে অব্যবহৃত জল স্তরে স্তরে ফিল্ট্রেশন হবার কারণে পানীয় জলে পরিণত হয়।
  • শহরে নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।
  • শস্যের সংক্রামক ব্যাধি হবার সম্ভাবনা খুবই কম।

Vertical Farming-এর সাহায্যে কি কি উৎপাদন করা যায় –

Vertical Farming-এর সাহায্যে বর্তমানে অনেক ধরণের ফসল চাষ করা সম্ভব হয়েছে, এর মধ্যে সবুজ সবজি, মাঝারি মানের ফসল, এমন কি বড় মানের ফসলও চাষ করা হচ্ছে। ছোট ফসলের মধ্যে লেটুস, ব্রকলি, কন্দজাতীয় ফসল, অ্যামার‍্যান্থাস ইত্যাদি; মাঝারি মানের ফসলের মধ্যে বাধাকপি, ফুলকপি, টম্যাটো, বেগুণ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি এবং বড় মানের ফসলের মধ্যে ভুট্টা, শোরগম ইত্যাদি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

তবে বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার তেমনভাবে প্রচলিত না হলেও সবুজ শাকসবজি উৎপাদন করা হচ্ছে অর্থাৎ মানুষের মধ্যে Vertical farming-এর ঝোঁক বৃদ্ধি করতে হলে আগে উপযুক্ত প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে শীতলীকরণ ও অনার্দ্রকরণ খরচ অত্যন্ত বেশী হবার কারণে এখানে বড় ও মাঝারি মানের ফসলের উৎপাদন সম্ভব নয়।

আগামী অর্থাৎ শেষ পর্বে আমরা আলোচনা করবো Vertical Farming কত প্রকার এবং সম্ভাব্য কোন পদ্ধতিটি বাংলাদেশের জন্য ব্যবহার করলে আমরা অধিক লাভবান হতে পারবো।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More